একজন পুলিশ কনস্টেবল এর বেতন কত? এবং অন্যান্য সুবিধা

বাংলাদেশ পুলিশের সর্বনিম্ন পদবী কনস্টেবল। এ পোস্টটি পাওয়ার জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি (S.S.C) পাস হলেই হয়। এই পোস্টের মাধ্যমে আমরা জানানোর চেষ্টা করব একজন পুলিশ কনস্টেবল এর বেতন কত? এবং বেতনের পাশাপাশি কি কি সুবিধা পেয়ে থাকে।

বাংলাদেশের দুই লাখ সদস্যের পুলিশ বাহিনীর ৬৫ শতাংশ কনস্টেবল নিয়ে গঠিতকনস্টেবলকে ১৭তম গ্রেডের তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত করা হয়। এরপর তাদেরকে ৬৫% মৌলিক প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। সম্পূর্ণ প্রশিক্ষণ শেষ করার পরে তারা চাকরিতে যোগদান করার সুযোগ পায়।

পুলিশ কনস্টেবল এর বেতন ও যেসব ভাতা পেয়ে থাকে

চাকরিতে যোগদান করার পরে তারা নিয়মিত বেতন-ভাতা পেয়ে থাকেন। প্রাথমিকভাবে একজন কনস্টেবল চাকরিতে যোগদানের পর সাধারণত ১৪,৪০০ টাকার মতো বেতন পেয়ে থাকেন। এর মধ্যে মূল বেতন ৯,০০০ টাকা, চিকিৎসা ভাতা ১,৫০০ টাকা, যুকি ভাতা ১,৫০০ টাকা, অস্ত্র ভাতা ১০০ টাকা সহ ধোলাই ভাতা, চুল কাটার টাকা, এবং টিফিন ভাতা পেয়ে থাকেন।

আরো পড়ুন : সর্বকালের রেকর্ড গড়ল স্বর্ণের দাম। 

পুলিশ কনস্টেবল এর বাসাভাড়া

একজন কনস্টেবলকে বাসা ভাড়া দেওয়ার ক্ষেত্রে কিছু রুলস ফলো করা হয়। যদি তিনি অবিবাহিত হয় তাহলে তার মূল বেতনের ২০ শতাংশ এবং যদি বিবাহিত হলে মূল বেতনের ৪০ শতাংশ পেয়ে থাকেন। একজন বিবাহিত কনস্টেবল যদি স-পরিবারে কর্মস্থলে থাকেন তাহলে তিনি ৪৫ থেকে ৬৫ শতাংশ হারে পর্যন্ত এলাকাভিত্তিক বাসা ভাড়া পেয়ে থাকেন। কর্মস্থল এবং আবাসস্থল এর মধ্যে যদি গড় দূরত্ব ০৫ কিলোমিটার হয়ে থাকে তাহলে যাতায়াত ভাড়া হিসেবে ২,০০০ টাকার মতো দেয়া হয়। এছাড়াও রয়েছে উৎসব ভাতা।

ছোট্ট শহর এবং উপজেলা পর্যায়ে বা তুলনামূলক কম আবাসিক এলাকার কর্মরত কনস্টেবলদের তুলনা মূলক কম ভাতা দেওয়া হয়।

পুলিশ কনস্টেবল যেসব রেশন ভাতা পেয়ে থাকে

রেশন হিসেবে একজন অবিবাহিত কনস্টেবল ১২কেজি চাল, ১০কেজি আটা, ২.৫০ কেজি ডাল, ০২ কেজি চিনি, এবং ২.৫০ লিটার বৈজ্য তেল পেয়ে থাকেন। বিবাহিত কনস্টেবলের চার সদস্যের পরিবারের সদস্যদের পরিমাণ সর্বোচ্চ ০৩গুণ পর্যন্ত হয়ে থাকে।

আরো পড়ুন :  ট্রেনের নিচে কাটা পড়লেন পুরস্কারপ্রাপ্ত তরুণ নির্মাতা

পুলিশ কল্যাণ তহবিল

একজন পুলিশ কনস্টেবল এর মাসিক বেতন থেকে একটি অংশ কল্যাণ তহবিলের জন্য কেটে রাখা হয়। যে অর্থ ভবিষ্যৎ সঞ্চয় হিসেবে কল্যাণ তহবিলে জমা রাখা হয়। একজন কনস্টেবলকে মাসিক এবং বার্ষিক ভিত্তিতে পুলিশ কল্যাণ তহবিলের বেশ কয়েকবার টাকা দিতে হয়। কথিত এই অর্থ পুলিশ বাহিনীর সদস্য এবং তাদের পরিবারের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার কাজে লাগানো হয়।

পুলিশ কনস্টেবল কি ধরনের কাজ করে?

সাধারণত একজন পুলিশ কনস্টেবল এর প্রধান কাজ হচ্ছে দেশ এবং জাতির সেবা করা। তাদের দায়িত্বের মধ্যে রয়েছে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ, ভিআইপি, গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো এবং তল্লাশি চৌকি পাহারা দেওয়া। অভিযানে যাওয়ার সময় সিনিয়র কর্মকর্তাদের সঙ্গে থাকা।

এ ছাড়াও একজন কনস্টেবলকে বিভিন্ন জনসভায় থাকা এবং নির্বাচনের দায়িত্বে অংশগ্রহণ করতে হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদেরকে সিনিয়র কর্মকর্তাদের আদেশে অন্যান্য কাজও করতে হয়।

তবে পুলিশ বাহিনীর দায়িত্ব শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সীমাবদ্ধ নয়। পাশাপাশি তাদেরকে পাসপোর্ট ভেরিফিকেশন, ইমিগ্রেশন এবং অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ কাজ করে থাকে।

পুলিশের কয় ধরনের নিয়োগ ও প্রমোশন হয়ে থাকে?

বাংলাদেশ পুলিশের ০৩ পদে ০৩ দরনের নিয়োগ হয় বলে প্রোমোশ‌ও ০৩ ধরনের হয়ে থাকে। এটি নির্ভর করে মঞ্জুরীকৃত পদের উপর। প্রমোশন এর ক্ষেত্রে একজন কনস্টেবল পদোন্নতি পেয়ে থাকেন যথাক্রমে:

  • নায়ক
  • এ.এস.আই
  • এস.আই
  • ইন্সপেক্টর
  • এবং এ.এসপি পর্যন্ত।

তবে কনস্টেবল থেকে এস.আই, ইন্সপেক্টর অহরহ হলেও খুব কম সংখ্যকই এ.এসপি হতে পারে। চাকরির বয়স ০৩ বছর পূর্ণ হওয়ার পর তারা পদোন্নতির পরীক্ষা অংশগ্রহণ করতে পারে।

পুলিশের পদোন্নতি কিভাবে নিশ্চিত করা হয়?

একজন নায়ক ১৫তম গ্রেডের তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। তার মূল বেতন ১০,২০০ টাকা।

কনস্টেবলের চাকরির বয়স যদি ০৬ বছর পূর্ণ হয় তাহলে এ.এস.আই পদে পদোন্নতির জন্য পরীক্ষায় অংশগ্রহণের যোগ্য হিসেবে তিনি বিবেচিত হন।

পদের ক্ষেত্রে বেশ কয়েক ধাপে পরীক্ষার মাধ্যমে নির্বাচন করা হয়। একজন এ.এস.আই এর বেতন ১৬,০০০ টাকা থেকে শুরু করে ৩৮,২৪০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।

আরো পড়ুন :  নোয়াখালীর সেনবাগে সড়ক দুর্ঘটনায় স্থানীয় ব্যবসায়ী নিহত

এ.এস.আই পদে প্রমোশন পাওয়ার চার বছর পরে সাব-ইন্সপেক্টর পদের জন্য পরীক্ষা দেওয়া সুযোগ হয়। পরীক্ষায় পাস করলে অ্যামলিস্টেড হয়ে থাকে। পরবর্তীতে কোটা খালি হলে প্রমোশন দেয়া হয়। আর যদি তা না হয় তাহলে প্রমোশনের যোগ্য হয়েও কোন লাভ হয় না।

পুলিশের চাকরি করে আর্থিকভাবে কতটা সফল হওয়া যায়?

অনেকে বলে থাকেন টাকা উপার্জন মুল লক্ষ্য হলে পুলিশের চাকরি করা উচিত নয়। কিন্তু একজন পুলিশের ক্ষেত্রে বেতন বাজার অনুসারে যথাযথ নয়। সমাজে এমন অনেক উদাহরণ রয়েছে যেখানে একজন পুলিশ অফিসারের অবসরের পরে অন্য কোথাও কাজ করে সংসার চালাতে হয়।

আর্থিক অনটনের পাশাপাশি তারা প্রয়োজনের সময় ছুটিও নিতে পারে না। এমনকি অনেকে রয়েছেন যারা ধর্মীয় উৎসবের সময় কর্মস্থল ছেড়ে যেতে পারেন না। কারণ পুলিশ আইন ১৮৬১ অনুযায়ী সাপ্তাহিক ছুটির কোন বিধানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য হিসেবে সপ্তাহের ৭ দিন আর ২৪ ঘন্টা তাদেরকে জরুরি পরিস্থিতির জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকতে হয়।

তবে কোন পুলিশ বাহিনীর সদস্য চাইলে একদিনের ছুটির মাধ্যমে বিশ্রাম নিয়ে শারীরিক অবসাদ দূর করতে পারেন।

উপসংহার

এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে আমরা জানান চেষ্টা করেছি একজন পুলিশ কনস্টেবল এর বেতন কত? এবং অন্যান্য সুবিধা ও অসুবিধা। আশা করি আপনারা পুলিশ কনস্টেবল সম্পর্কিত সম্ভাব্য ধারণা লাভ করেছেন। আপনার কোন মন্তব্য থাকলে কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন এবং এই পোস্টটি যদি ভালো লাগে তাহলে শেয়ার করতে পারেন।

সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর

পুলিশ কনস্টেবল এর চাকরি পাওয়ার জন্য কি শিক্ষাগত যোগ্যতা লাগে?

এস‌এস‌সি (SSC) পুলিশ কনস্টেবল এ চাকরি করার জন্য আপনাকে সর্বনিম্ন এসএসসি পাস করতে হবে।

বাংলাদেশ পুলিশের সর্বনিম্ন পদবী কি?

কনস্টেবল।

একজন পুলিশ কনস্টেবল এর মাসিক বেতন কত?

পুলিশ কনস্টেবল এর মাসিক বেতন ১৪,৪০০৳।

পুলিশ কনস্টেবল কি ধরনের দায়িত্ব পালন করে?

কনস্টেবল ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব সহ আরো অন্যান্য দায়িত্ব পালন করে।

Leave a Comment